মঙ্গলবার, ১৯ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:১৬ পূর্বাহ্ন
বিশেষ প্রতিবেদক, আমবাড়ি (দোয়ারাবাজার) সুনামগঞ্জ থেকে ফিরে:
কথায় আছে, ‘চোরের দশদিন, গৃহস্থের একদিন’; ‘পড়বিতো পড় মালির ঘাড়ে’। একজন আলেমকে ফাঁসাতে গিয়ে আরেকজন আলেমের প্ররোচণায় আলেম হয়ে কর্তৃপক্ষের অনুমতি না নিয়ে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে মোবাইলে ভিডিও করতে গিয়ে আটক হয়ে মুছলেকা দিয়ে ছাড়া পেলেন। শুধু তাই নয়, গত ফেব্রুয়ারিতে চুরি হওয়া বাসার তথ্যও বেরিয়ে আসলো অনায়েসেই। এমন ঘটনার জন্ম দানকারীরা এখন সাধারণ মানুষের মুুখে মুখে ও স্যোসাল মিডিয়ায় আলোচিত। ঘটনাটি ঘটেছে গত ১৪ জুন রোববার।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলার মান্নারগাঁও ইউনিয়নের ‘মারকাযুল উলূম ফাতেমাতুয যাহরা রা. পঞ্চগ্রাম মহিলা মাদরাসা আমবাড়ি’ কর্তৃপক্ষের অনুমতি না নিয়ে অসৎ উদ্দেশ্যে মোবাইলে ভিডিও ধারণ করছিলেন বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার সিরাজপুর (বাগগাঁও) গ্রামের আফছার উদ্দিন মাস্টারের ছেলে ও দিরাই জামেয়ার মুহাদ্দিস মুফতি হোসাইন আহমদ সারোয়ার। এ ঘটনাটি মাদরাসা কর্তৃপক্ষের নজরে আসার সাথে সাথেই তারা তাকে অফিসে নিয়ে যান। ভিডিও ধারণের কারণ জানতে চাইলে তিনি জানান, তার পূর্ব পরিচিত জেলার ছাতক উপজেলার হায়দরপুর নিবাসি আনছার মিয়ার ছেলে বর্তমান লন্ডন প্রবাসি লিভারপুল বাংলাদেশি মসজিদের ইমাম মাওলানা কামরুল ইসলাম পাঠিয়েছেন ভিডিও ফুটেজ ও কয়েকজন ব্যক্তির বক্তব্য ধারণ করে তার কাছে পাঠাতে। একথা শোনার পরই মাদরাসা কর্তৃপক্ষ স্তম্ভিত হয়ে পড়েন এবং সাথে সাথে কমিটির লোকজনকে খবর দেন। মাদরাসা পরিচালনা কমিটির দায়িত্বশীলরা এসে মুফতি হোসাইন আহমদ সারোয়ারকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে থাকেন। মাদরাসা কর্তৃপক্ষের জেরার মুখে তিনি বিস্তারিত খুলে বলেন। এক পর্যায়ে কমিটির সদস্যরা মোবাইল চেক করলে গত ফেব্রুয়ারিতে মাওলানা আব্দুল মুুছাব্বিরের লন্ডনস্থ বাসা থেকে চুরি হওয়া কাগজপত্রের সন্ধান পান।
তাছাড়া মাওলানা কামরুল ইসলাম ইমু চ্যাটে মুফতি হোসাইন আহমদ সারোয়ারকে স্থানীয় তিনজনের নাম ও মোবাইল নাম্বার দিয়ে যোগাযোগ করতে বলেছেন। যাদের সাথে যোগাযোগ করতে বলেছেন, তারা হলেন মান্নারগাঁও ইউনিয়নের হাজারীগাঁওয়ের মৃত মছদ্দর আলীর ছেলে মাওলানা ইব্রাহিম আলী কাসিমী, ধনপুর গ্রামের মফিজ আলীর ছেলে ও মৃত খলিলুর রহমানের (পালক পিতা) ছেলে মুক্তার আলী ও গোপালপুর গ্রামের আবুল বশরের ছেলে মাওলানা ছাইদুর রহমান।
সূত্র আরও জানায়, মান্নারগাঁও ইউনিয়নের গনারগাঁও গ্রামের মৃত আব্দুস সাত্তারের ছেলে লন্ডন প্রবাসি ও মারকাযুল উলূম ফাতেমাতুয যাহরা রা. পঞ্চগ্রাম মহিলা মাদরাসা আমবাড়ির প্রতিষ্ঠাতা মুহতামিম মাওলানা আব্দুল মুছাব্বির গত ফেব্রুয়ারির ৮-২৭ তারিখ পর্যন্ত সপরিবারে উমরা পালনের জন্য সৌদিআরবে অবস্থান করেন। উমরা থেকে ফিরে এসে বাসা চুরি হওয়ার বিষয়টি দেখতে পান। মাওলানা কামরুল ইসলাম ও মাওলানা আব্দুল মুছাব্বির আত্মীয়তার সুবাধে বিভিন্ন সময় পূর্ব থেকেই কিছু দ্বন্দ্ব চলে আসছিল। এমনকি মাওলানা আব্দুল মুছাব্বিরকে দেখে নেয়ারও হুমকি দেন মাওলানা কামরুল ইসলাম। বাসা চুরি হওয়ার পর থেকে তাদের প্রবল সন্দেহ ছিল মাওলানা কামরুল ইসলামের প্রতি। তবে উমরাহে থাকাকালীন এ ঘটনা ঘটায় তাদের কাছে কোন প্রমাণ না থাকায় সরাসরি তাকে অভিযুক্ত কিংবা আইনি লড়াই করতে পারছিলেন না।
কথায় আছে না ‘ধর্মের কল বাতাসে নড়ে’-এই প্রবাদ বাক্যের বাস্তবতা দেখতে পেলেন অবশেষে। মাওলানা আব্দুল মুছাব্বিরের বাসায় রক্ষিত মাদরাসার কাগজপত্র কিভাবে মুফতি হোসাইন আহমদ সারোয়ারের মোবাইলে এলো-এমন প্রশ্ন করতেই একে একে বেরিয়ে এলো থলের বিড়াল। তিনি অকপটে স্বীকারোাক্তি দিয়ে মুছলেকা নামায় স্বাক্ষরও করলেন। স্বীকার করলেন ভেতরগত বিষয় না জেনেই প্ররোচণায় পড়ে এমন ভুল কাজ করেছেন। এ সময় মাদরাসার বেশ কয়েকজন শিক্ষক, পরিচালনা কমিটির সদস্যসহ এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন। পরে মাদরাসা কর্তৃপক্ষ মান্নারগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের কাছে হস্তান্তর করেন মুফতি হোসাইন আহমদ সারোয়ারকে। খবর পেয়ে সিরাজপুর (বাগগাঁও) থেকে তার আত্মীয়-স্বজন এসে মুছলেকায় স্বাক্ষর দিয়ে তাকে তাদের জিম্মায় নেন।
এ ব্যাপারে মুফতি হোসাইন আহমদ সারোয়ার ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে জানান, অন্যের প্ররোচণায় পড়ে কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া মহিলা মাদরাসার ভিডিও করা ঠিক হয়নি। আমি তাদের কাছে ভুল স্বীকারও করেছি। তিনি আরও জানান, মাদরাসা কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন ধরণের ভয়ভীতি দেখিয়ে আমার কাছ থেকে মুছলেকা রেখেছেন, আমি চাপে পড়েই তাতে স্বাক্ষর দিতে বাধ্য হয়েছি।
এদিকে মাওলানা আব্দুল মুছাব্বিরের বাসা থেকে চুরি হওয়া জিনিসপত্রের মধ্যে স্বর্ণালঙ্কার, নগদ পাউন্ড ও জরুরী কাগজপত্র রয়েছে। এ ব্যাপারে তারা আইনি পদক্ষেপ নিবেন বলে জানা গেছে।